ওদের ভবিষ্যৎ এবং আমাদের করনীয়

আমি যখন ক্লাস ৯/১০ এ পড়ি, তখনও সেক্স সম্পর্কে জ্ঞান অত্যন্ত সীমিত। মেয়ে হওয়ায় আমার পৃথিবী স্কুল-বাসা-নানুবাসায় সীমাবদ্ধ ছিল। তাই জানার সুযোগও তেমন হয়ে উঠেনি। আমার মত ৬০% মেয়ের ক্ষেত্রেই হয়ত ব্যাপারটা মিলে যাবে। অপরদিকে একটি ছেলে সেক্স সম্পর্কে জানতে থাকে ৬/৭ এ পড়ার সময় থেকে। ৮০% ছেলে ৭ এর পর থেকেই নিয়মিত পর্ণ দেখা শুরু করে। এগুলো ছিল ফ্যাক্টস। ৯৮% শিশু কোন না কোন ভাবে যৌন নির্যাতনের স্বীকার হয়। যৌন নির্যাতন মানে যে শুধু জামা কাপড় খুলে রেপ করা বুঝায় তা নয় কিন্তু, বাচ্চাটার গায়ে হাতাহাতি করা, আদর করার নামে এইখানে ওইখানে ছুঁয়ে দেওয়াও কিন্তু যৌন নির্যাতনের পর্যায়ে পড়ে। এবং এই হাতাহাতি নিশ্চয়ই রাস্তার অপরিচিত মানুষ করতে পারে না, তাই না! করে খুব আপনজন। গ্রাম থেকে আসা চাচা, পাশের বাসার আঙ্কেল, উপর তলার ভাইয়া, নিচের তালার মামা্‌, বাসার কাজের ছেলেটা, স্কুলের মাস্টার সাহেব-দাদা রা… অহহো, বেচারা ছেলেদেরকেও যে যৌন নির্যাতন করা হয় তা তো বলিই নাই। ছেলেরাও বাদ যায় না কিন্তু। আরকি ছেলেদের যৌন নির্যাতনের স্বীকার হওয়া একটু কম আরকি। তাও খুব কম তা কিন্তু বলা যাবে না। এগুলো ছিল তথ্য। এখন আসল ঘটনায় আসি। যেই মেয়ে ৯/১০ এ পড়ার সময় সেক্স সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে, বা যেই ছেলে পর্ণ দেখে সেক্সের প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করে সেই ছেলে/মেয়ে কিভাবে সুষ্ঠু ভাবে বড় হয়ে সুন্দর ভবিষ্যৎ সৃষ্টি করবে? বাচ্চাবয়সে যারা এই রকম দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয় তাদের বেশির ভাগেরই ছেলেবেলা কাটে ভয়ংকর বিভীষিকায়। আমি কিভাবে এতো কিছু জানি এইটাও একটা ব্যাপার। ব্যাপারটা হল, আমার ছেলেবেলাও এমন সুন্দর বিভীষিকার মধ্যে কেটেছে। এখনও মাঝে মাঝে সেই সুন্দর দিনগুলো দুঃস্বপ্নে তাড়া করে। ধুর, যা বলতে চাচ্ছিলাম কিছুই বলা হচ্ছে না। বলতে চাচ্ছিলাম সেক্স এডুকেশনের গুরুত্ব নিয়ে। যে বাচ্চাটার এই জিনিসটা নিয়ে ন্যূনতম ধারণা নেই, সে নিজেকে কিভাবে রক্ষা করবে, বা কারো কাছে সাহায্য চাইবে ওকে রক্ষা করার জন্যে? আমরা বলি এইসব ব্যাপারে অজ্ঞ রেখে আমরা আমাদের বাচ্চাদের রক্ষা করছি!!! ওকে, “রক্ষা করছি” from what? আমরা যদি ওদের সঠিক যৌন জ্ঞানদান করতে না পারি তাহলে ওদের ভবিষ্যতই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেনা কি?? আমাদের বাচ্চারা সেক্স সম্পর্কে জানতে পারে পাড়ার/স্কুলের ফ্রেন্ডদের কাছ থেকে, এরপর হয়ত কোন পর্ণ ম্যাগাজিন অথবা সরাসরি পর্ণগ্রাফি দেখে সাধারণ জ্ঞান বাড়ায়। এই থিওরি যে শুধু ছেলেদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা নয়। ছেলে মেয়ে উভয়ই এমন অস্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে সেক্স এডুকেশন লাভ করে। আচ্ছা, ওরা তো সেক্স সম্পর্কে জানবেই তাই না?? কয়দিন আর অজ্ঞ রাখা যাবে বল?? সেক্স কিন্তু খাওয়া এবং ঘুমের মত মৌলিক শারীরিক চাহিদার অন্তর্গত। তাই আমরা যতই তাদের “রক্ষা করা”র চেষ্টা করি না কেন, সেই চেষ্টা বিফল হতে বাধ্য। তাহলে কেন আমরা এই ট্যাবু থেকে বেড়িয়ে এসে একটা সুষ্ঠু শিক্ষা দেওয়ার কথা চিন্তা করছি না!!! এতক্ষণ বললাম সমস্যার কথা। বেশিরভাগ মানুষ এই পর্যন্ত এসেই হাল ছেড়ে দেয়। সমস্যাটার সমধান করার কথা চিন্তা করে না। অবশ্যই যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই ট্যাবু কালক্র মধ্যে বদলে ফেলা সম্ভব না। কিন্তু কাউকে না কাউকে তো এগিয়ে আসতে হবে। আমি ঠিক করেছি আমার বাচ্চাদের সেক্স এডুকেশনে আমি কোন ঘাটতি রাখব না। কোন এক সুন্দর বিকেলে আমার কোলে বসিয়ে আমি ওদের সুন্দর পৃথিবীর কিছু অসুন্দর দিকের ধারণা দিব। পুরো ব্যাপারটা হয়তো ও একেবারে বুঝবে না। তাই ধাপে ধাপে, বয়স বুঝে। আবার একটু তথ্য দেই, পশ্চিমা দেশ গুলোতে স্কুলের সাধারণ পরাশুনার পাশাপাশি সেক্স এডুকেশনেরও ব্যবস্থা আছে। ওরা ওদের বাচ্চাদের কি সুন্দর ছোট থেকেই প্রস্তুত করে। তাই হয়তো ওদের দেশে বাচ্চাদের উপর যৌন নির্যাতনের ও ধর্ষণের হার একটু কম। আমি বলছি না যে একেবারে নেই… আছে। কারন মানুষের বেশ ধরে কিছু শয়তান সব জায়গায়ই থাকে। শয়তান বলেছি জানোয়ার নয়… কারণ জানোয়ার বলে পশু শ্রেণীর অপমান আমি করতে চাই না। যাই হোক, আসল কথা হল আমার বাচ্চার সুরক্ষা আমার হাতে। আমি চাইব আমার শিশু দুনিয়াদারি সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান নিয়ে বড় হয়ে উঠুক। 🙂